নীলফামারী শহরে ৭ কিমি তে ৪৩ বাঁক 


editor প্রকাশের সময় : ১৩/০২/২০২৩, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ /
নীলফামারী শহরে ৭ কিমি তে ৪৩ বাঁক 

 

মোঃ আব্দুল হামিদ সরকার নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি।

নীলফামারী জেলা শহরের কালিতলা থেকে পুলিশ লাইন্স পর্যন্ত ৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়ক টি যেন মরণ ফাঁদ। এখান দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের ৪০ থেকে ৪২টি আঁকা বাঁকা বাঁক পার হতে হয়। এলাকাবাসী দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর তিন বছর আগে সওজ বিভাগের অর্থায়নে ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এটি এখন জনগণের কোনও কাজে আসছে না।
সূত্র জানায়, কালিতলা ও মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে ৪২ মোড়ের দুই ধারে রয়েছে দোকানপাট ও বসতবাড়ি। যে কারণে দুর্ভোগে পড়ে বাস, ট্রাক, ট্যাংক লরি, ১০ চাকার ট্রাক ও নৈশ কোচ সহ দূরপাল্লার ভারী যানবাহন। এখানে নানা সময় ঘটেছে অনেক ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
জেলা শহরটি এক রাস্তার ওপরে হওয়ায় যানজট নিরসনের জন্য স্থানীয় পর্যায় অনেক আন্দোলন হয়েছে। এরপর ২৭ নভে/১৮ বাইপাস সড়কটির কাজ শুরু হয় এবং শেষ ১৪ ফেব্রু/২০ । গত বছরের ২১ ডিসে/২২ সড়কটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু সেটির সুফল থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী।
জেলা শহরের বড় বাজার এলাকার মুদি ব্যবসায়ী আবু সাইদ মিলন জানান, ‘কালিতলা মোড় থেকে ওই সড়কটি চালু হলে প্রধান শহরটি যানজট মুক্ত হবে। বিশেষ করে সকাল ও বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকাগামী নাইট কোচ বিআরটিসিসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে সড়কটি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই সময় জরুরী রোগী পরিবহনকারী ভ্যান, মাইক্রো ও এ্যাম্বুলেন্স শহরের মাঝপথে আটকা পড়ে যায়। আর দুর্ঘটনা তো আছেই।
একই শহরের মুদি ব্যবসায়ী তাপস কুমার ভৌমিক বলেন, ‘নীলফামারী শহরে একটি মাত্র রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, মুমূর্ষু রোগী ও উত্তরা ইপিজেড র হাজার হাজার চাকরিজীবী ও বাস-ট্রাক সকাল-বিকাল একই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এতে প্রতি মাসে দু-একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। তাই বাইপাস সড়কটি চালু করার অনুরোধ জানান শহরবাসী।জেলা শহরের মাইক্রো ড্রাইভার কাজল ইসলাম বলেন, ‘সকাল-বিকাল দুই বেলা শহরের ভেতরে যানজোট শুরু হয়। মাঝেমাঝে রোগী নিয়ে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। অথচ শহর থেকে হাসপাতালের দূরত্ব ১০ মিনিটের। বাইপাস সড়কটি চালু হলে যাত্রী দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে। দ্রুত বাইপাস সড়কটি সংস্কারের জন্য শহরবাসীর পক্ষে দাবি জানান তিনি।’
নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের বাদিয়ার মোড় এলাকার পান দোকানদার খান জাহান আলী বলেন, ‘বাইপাস সড়কটি তৈরি করার অনেক দিন হলো, কিন্ত বাস-ট্রাক চলে না। কারণ কী জানি না। তবে সড়কটির পিছনে নাকি সরকার অনেক টাকা খরচ করছে, তাতে লাভ কী হলো? সড়কটি চালু হলে ব্যবসাসহ মানুষের উপকারে আসবে। এদিকে রিকশা, ভ্যান, অটোভ্যান, পিকআপ, বাস, ট্রাক ও নাইট কোচের যন্ত্রণায় শহরে প্রবেশ করা যায় না।’
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি প্রকৌশলী এস এম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, ‘বাইপাস সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৪ ফেব্রু/২০ । কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে আজ পর্যন্ত রাস্তাটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। কারণ, ওই রাস্তা দিয়ে ১০ চাকার ট্রাক ও নাইট কোচ মোড় নিতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আঁকাবাঁকা সড়কটি প্রশস্ত করা হলে যানবাহনগুলো অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে। এতে শহরে চাপ অনেকটা কমে আসবে। তা ছাড়া বেঁচে যাবে দর্ঘটনার হাত থেকে অনেক তাজা প্রাণ।’
নীলফামারী সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, ‘৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কে বাঁক বা মোড় পড়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪২টি। এটি সোজা করার কাজ প্রক্রিয়াধীন। বাইপাস সড়কটি চালু বা সোজা করতে গেলে প্রায় ৮ দশমিক ৪ একর জমির প্রয়োজন। এটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় এমপি মহোদয় র সঙ্গে কথা চলছে। আশা করি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। তাহলেই শহর যানজটমুক্ত হবে।