আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ কথা না রাখায় হতাশ


editor প্রকাশের সময় : ২৩/০৪/২০২৪, ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ /
আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ কথা না রাখায় হতাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগদলীয় এমপিদের কেউই কথা শোনেননি। কেউই কথা রাখেননি। তারা আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আত্মীয়স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেননি। দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে তারা নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রেখেছেন।

গতকাল সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সর্বশেষ খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তবে দিন শেষে তারা একজনেরও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের খবর পাননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সমকালকে বলেন, দলের নির্দেশনা থাকার পরও দলের সংশ্লিষ্ট এমপিদের কেউই কথা রাখেননি। এ অবস্থায় আগামী ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা। এই নির্দেশ অমান্য করা হলে সাংগঠনিকভাবে শাস্তি দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য দলের আট সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সুজিত রায় নন্দী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং এমপিদের সঙ্গে দফায় দফায় কথাও বলেছেন। অনেকে আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে ফলাফল শূন্য।

এ নিয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন নেতারা। তারা বলেছেন, কয়েকজন এমপি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে না নিয়ে রীতিমতো দুঃসাহস দেখিয়েছেন। তারা দলের সিদ্ধান্ত কার্যকরের বিষয়টি আমলেই নেননি। এটা খুবই দুঃখজনক। এ অবস্থায় দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা সংশ্লিষ্ট এমপিদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক এই বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। তাদের কয়েকজন সমকালকে বলেছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য কয়েকজন সংশ্লিষ্ট এমপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কারও কারও ফোনে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে নির্বাচন থেকে স্বজনদের সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কয়েকজন এমপি বলেছেন, দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে নির্বাচনের শুরুতে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা সম্ভব হতো। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চার দিন আগে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানোর ফলে প্রার্থীরা সরে যাওয়ার সময় পাননি। কেননা তারা এর আগেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছেন। এ ছাড়া নিকটাত্মীয় বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি জানান, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিকল্প নেই। তাঁর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে প্রার্থী দু’জন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ছেলে সরে গেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হবে না। তা ছাড়া দলীয় এমপির স্বজনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলে কুমিল্লা-৬ আসনে দলের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা সেখানে মেয়র পদে লড়লেন কীভাবে?

দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম এবং ভাতিজা আলী আফসার রানা, নীলফামারীর ডিমলায় আফতাব উদ্দিন সরকার এমপির চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক সরকার ও ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল, সোনাতলায় এমপির ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন, পাবনার বেড়ায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ভাই আবদুল বাতেন, ভাতিজা আবুল কালাম সবুজ, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় আলী আজগর টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর বাবু, পিরোজপুরের নাজিরপুরে অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এমপির ভাই এসএম নুর ই আলম সিদ্দিকী, কুষ্টিয়া সদরে মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপির চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা, মাদারীপুর সদরে শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান, ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খান, নরসিংদীর পলাশে ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ হিরা, মামাতো ভাই খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একরামুল করিম চৌধুরী এমপির ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী, হাতিয়ায় মোহাম্মদ আলী এমপির ছেলে আশিক আলী এবং কক্সবাজারের মহেশখালীতে আশেক উল্লাহ রফিক এমপির ভাতিজা হাবিব উল্লাহ।

এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক এমপির ভাই সালাম মল্লিক, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিরুল ইসলাম ও লাকসামে তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী।

নাটোরের সিংড়ায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশাকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র: ইনসাইডার।