“জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে” ‘দুই পুলা নিয়ে এখন মরলেই বাঁচি’


editor প্রকাশের সময় : ১৬/০৩/২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ণ /
“জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে” ‘দুই পুলা নিয়ে এখন মরলেই বাঁচি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার স্বামীহারা ষাটোর্ধ্ব আয়শা বেগম। এক সময় অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন আয়শা বেগম। তবে তিনি নিজেও এখন অসুস্থ। বয়সের ভারে কাজ ছেড়েছেন বহুদিন আগে। নানা অসুস্থতা এবং বার্ধক্যজনিত কারণে স্বামী আব্দুল সালামের মৃত্যু হয়েছে ১৫ বছর আগে।

অভাবের সংসারে নিজের অসুস্থতার পর দুই প্রতিবন্ধী সন্তান যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা আয়শা বেগমের।

নিজের দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন তার। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় অন্যের জমিতে ভাঙা ঘরে কোনো মতো দিন পার করছেন তিনি। যেখানে একটু বৃষ্টি হলেই দুই প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে মাথায় পলিথিন দিয়ে ঘরের এক কোণে বসে থাকতে হয় আয়শা বেগমকে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আয়শা বেগমের দুই ছেলে আতিকুল (৪৬) এবং আতিউর (৪৩)। জন্মের এক বছরের মাথায় দুইজনই পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়।

অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় দুইজনই প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। এখন তাদের চলার একমাত্র বাহন হুইল চেয়ার। এই পরিবারের একমাত্র উৎস এখন প্রতিবন্ধী ভাতা। যেটা দিয়ে কোনো রকম চলে সংসার। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের ওষুধ এবং সংসার এই ভাতার টাকায় চলে।

যার ফলে এই রমজান মাসে আয়শা বেগমকে রোজা থাকতে হচ্ছে না খেয়ে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতিক এবং আতিউরের চিকিৎসা খরচে বাড়ছে। মা আয়শা বেগম বলেন, ‘দুই পুলা নিয়ে এখন মরলেই বাঁচি’। এহন “জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে”। ভাতার টেহাই দুইজনের ডাক্তর খরচি চলে না। রোজার মইদ্দে আগরাইত, পরবাতে ডাইল ভাত খাইয়ে রোজা রাহি।

প্রতিবেশী হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, আতিকুল ও আতিউর তারা জন্ম থেকেই পোলিও রোগে আক্রান্ত। সঠিক চিকিৎসার অভাবে তারা এখন অনেক অসুস্থ।

তাদের মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন এবং এলাকাবাসী কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে চলেতেন। এখন তারা বেশি অসুস্থ। ঘরে খাবার নেই তাই সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানায়।

প্রতিবেশী আমিনুল ইসলাম বলেন, এই পরিবারটা অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন। যার জন্য তাদের জীবনযাপন করতে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। সমাজের বিত্তবান এবং সরকার এগিয়ে এলে তাদের বেঁচে থাকাটা আরও একটু সহজ হতো।

রাজিব মিয়া বলেন, আমরা ছোট থেকে এই পরিবারটাকে দেখে আসছি তারা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। সরকার যদি তাদের জন্য ভালো কিছু করতেন তাহলে তাদের চিকিৎসা এবং খাবারের ব্যবস্থা হতো।

এই বিষয়ে শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জুয়েল আকন্দ বলেন, তাদের পরিবারের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিয়েছি।

সম্প্রতি তাদের প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের জন্য আরও কিছু করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করব।

পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ করব তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।