কীর্তিমানদের বিদায় কখনো কাঁদায় কখনো হাসায়-সুলতানুল আরেফীন আদিত্য


editor প্রকাশের সময় : ০৩/০৩/২০২৩, ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ /
কীর্তিমানদের বিদায় কখনো কাঁদায় কখনো হাসায়-সুলতানুল আরেফীন আদিত্য

দৈনিক সকাল প্রতিদিন ডেস্ক।

বদলি বিষয়টা আমি উপভোগ করি।বদলি নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ কিংবা দু:খ নেই।আমার যত বদলি হবে আমি তত ঘুরে ঘুরে দেশের সৌন্দর্য দেখবো।আমি এখানে সারাজীবনের জন্য আসিনি।আগে ছিলাম এক জেলায়।এখন আপনাদের উপজেলায়।কথাগুলো বলছিলেন বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনমুন জাহান লিজা।সময়টা ছিল ২০২১ এর ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে।তিনি সদ্য যোগদান করেছেন।আমি তার সামনের চেয়ারে বসে চা খাচ্ছি আর ভাবছি মানুষ বদলি বিষয়টাকেও এত সুন্দর করে ভাবতে পারে।তার পরিচ্ছন্ন শৌখিন ভাবনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সেদিনের মতো বের হয়ে আসলাম।আমি যেহেতু বকশীগঞ্জের মানুষ ইচ্ছা অনিচ্ছায় সারাদেশের পাশাপাশি বকশীগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের কর্মকাণ্ডগুলো ফলো করতাম।তন্মধ্যে একটা বিষয় ভাইরাল হয়েছিল।সেটা হলো,বকশীগঞ্জের ইউএনও,র ছাদ বাগান।টিভি, নিউজ পোর্টালে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনমুন জাহান লিজার বাসভবনের পরিত্যাক্ত ছাদে,ছাদ বাগানের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।এই প্রতিবেদন যখন দেখছিলাম তখন তার বদলি বিষয়ক কথাটা মনে কড়া নেড়েছিল।আর ভাবছিলাম,এই মানুষটা জানেই তার যে কোন সময় বদলি হতে পারে।তবুও সে ছাদ বাগান করল।আসলেই কীর্তিমানরা কখনো নিজের কথা ভেবে কাজ করেন না।সম্প্রতি তার প্রমোশন হয়েছে।খুব শীঘ্রই তিনি জামালপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তার কর্মস্থলে যোগদান করবেন।আজ বৃহস্পতিবার (২মার্চ ২০২৩ইং) বকশীগঞ্জের ইউএনও হিসেবে তার শেষ কর্ম দিবস।অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়েছেন,পাচ্ছেন।যা বিরল ই বলা চলে।গতকাল উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, এমপি।সেখানে আবেগঘন পরিবেশ তৈরী হয়।তিনি নতুন কর্মস্থলে যাবেন সেখানেও হয়তো আরেকটা ছাদ বাগান দিবেন।শৌখিন মানুষরা এমন ই হয়।আমি প্রতি বছরই একটা করে,প্রাচুর্য পাঠাগার,নামক ভ্রাম্যমান পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি।আমার ইচ্ছে ছিল উনি যেন একটা পাঠাগার উদ্বোধন করেন।সেই সুবাদে বেশ কয়েকবার তার সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য হয় আমার। তখনি তার সৃজনশীলতা ও শৌখিন বিষয়গুলো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়।আপাদমস্তক পরিপাটি একজন মানুষ ইউএনও মুনমুন জাহান লিজা।উপজেলায় তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেছেন তন্মধ্যে বিজয়মঞ্চ, শিশু পার্ক(কাজ চলমান)পুকুর পাড়ের জলসিড়ি,মহিলাদের নামাজ ঘর,ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার,মহিলাদের ওয়াশ ব্লকই ত্যাদি।যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।বদলি কিংবা বিদায় গুলোতে একটা মায়ার রেশ থাকে।মায়া জিনিসটা এমনই যেন ছায়ার মত লেগেই থাকে।ব্যাপারটা ঠিক সেরকম। আমরা যখন একটা জায়গায় বেশ কিছুদিন অবস্থান করি, সেই জায়গাটার জন্য মায়া কাজ করে।কীর্তিমানদের ব্যাপার গুলো আরেকটু আলাদা।তাদের কর্মই তাদের মনে করিয়ে দিবে বহুদিন কিংবা বহু বছর।ইউএনও মুনমুন জাহান লিজা দীর্ঘ দু-বছরেরও অধিক সময় ধরে বকশীগঞ্জের মানুষের বিপদাপদে ছায়ার মত লেগে ছিলেন।যেখানে যা লাগতো,সেখানে পূর্ণতায় যেন তার প্রাপ্তি ছিল।বকশীগঞ্জের মানুষও কম দিতে জানেন না। ভালবাসার প্রাপ্তি যেন এক সমুদ্র ভালবাসা দিয়েই ভরিয়ে দিয়েছে।যা বিদায়ী সংবর্ধনার দিকে তাকালেই বোঝা যায় ।সদ্য বিদায়ী ইউএনও মুনমুন জাহান লিজা তার নতুন কর্মস্থলে যোগ দিবেন ।নতুন করে আরেকটা মিশন শুরু করবেন।তার রেখে যাওয়া ছাদ বাগান,মহিলাদের নামাজ ঘর ওয়াশ ব্লক,ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার,পুকুর ঘাটের সামনে এসে দাঁড়াবে নেইম ফলকে চোখ পড়তেই দেখবে পরিকল্পনায় তার নাম দেখে মনের অজান্তেই হয়তো চোখের কোণে জল আসবে কিংবা তার কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে মৃদু হাসি হাসবে।কীর্তিমানদের বিদায় এমনই কখনো কাঁদায় কখনো হাসায়।