ঢাকা ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জের এস আলম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে শিশুর জীবন বিপন্ন

  • প্রতিবেদক এর নাম
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৬৯ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড ফজর আলী গার্ডেন সিটি ভবনে এস আলম ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে অপচিকিৎসা। অদক্ষ হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।

কাগজে কলমে ডায়াগনস্টিক সেন্টার হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। মাইমুনা সুলতানা
নামে ৪ বছরের এক শিশুর রক্তের ইনফেকশন পরিমাণ নির্ণয় পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। ফলে শিশুটির জীন বিপন্ন হওয়ার
পথে।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি পাইনাদী এলাকার বাসিন্দা মো. শফিকের ৪ বছরের মেয়ে মাইমুনা সুলতানা জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে ১৫ এপ্রিল হাতুড়ে ডাক্তার ফিরোজ আলমের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ডাক্তার ফিরোজ আলম
শিশুটিকে হেমাটোলজি ও সেরোলজি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরে শিশুটিকে নিয়ে তার পিতা এস. আলম ডিজিটাল ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করান।

সেরোলজি পরীক্ষায় শিশুটির সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (সিআরপি) পরীক্ষার রিপোর্টে রক্তের পেণ্টামেরিক প্রোটিন ৫০ দশমিক ২ এম.জি/এল পরিমাণ দেখানো হয়। রিপোর্টে এম.ফিল সি প্যাথলজি ডাক্তার মো. শাহাদাত হোসেন ও ডিপ্লোমা ইন ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তার সাকিল
পারভেজের স্বাক্ষর রয়েছে। সে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে হাতুড়ে ডাক্তার ফিরোজ আলম শিশুটিকে ইনজেকশন ও ওষুধ দেন। এতে শিশুটির শারীরিক অবস্থা চরম অবনতি হয়।

শিশুর পিতা শফিকুল বলেন, মেয়ের অবস্থা খারাপ হলে আমি অন্য একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাই। তখন এ রিপোর্ট দেখে ওই ডাক্তার অবাক হয়ে বলেন, মানুষের রক্তে ইনফেকশনের পরিমান কখনো ৫০ দশমিক ২ এম.জি/এল হতে পারে না। তাই তিনি আবার পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। তখন আমি ১৭ এপ্রিল মেয়েকে সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে আবার পরীক্ষা করাই। সেখানে পরীক্ষা রিপোর্টে রক্তের পেণ্টামেরিক প্রোটিন পরিমাণ আসে ১৫ দশমিক ১ এমজি/এল। তখন আমি প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী ডাক্তার মো. মামুন অর রশিদ ও রেহানা আক্তার সোনিয়াকে এস. আলম ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট দেখালে তারাও অবাক হয়ে বলেন এটা অসম্ভব। রিপোর্টটি
সঠিক হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এস.আলম ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক একাডেমিক শিক্ষাগত ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তার, ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত নার্স ও রোগী দেখার জন্য
নিয়মিত এমবিবিএস ডাক্তার নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তারা নিজেরাই মনগড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা রিপোর্ট তৈরি তাদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নামি-দামি সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের এমবিবিএস ডাক্তার ও ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তারের সিল স্বাক্ষর দিয়ে রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। তাদের এ ভুল রিপোর্টে চিকিৎসা করে রোগীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, একদিন আগে পরের রিপোর্ট কিছু ব্যবধান হতেই পারে। তাই বলে ৩৫ পার্সেন প্রশ্ন করলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়ে ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তার সাকিল পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ডাক্তার সাকিল পারভেজ বলেন, আমাদের রিপোর্ট ভুল নয়। আমাদের রিপোর্টের দুদিন পর ওই রিপোর্ট করা হয়েছে। দুদিন ওষুধ সেবন করায় শিশুটির রক্তের প্রোটিন পরিমাণ কমে গেছে।

খবর টি শেয়ার করুন :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Munna Khan

সর্বাধিক পঠিত

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমপি প্রার্থী সিরাজুল মামুনের পক্ষে মিশনপাড়ায় গণসংযোগ

নারায়ণগঞ্জের এস আলম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে শিশুর জীবন বিপন্ন

প্রকাশের সময় : ০৭:২৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড ফজর আলী গার্ডেন সিটি ভবনে এস আলম ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে অপচিকিৎসা। অদক্ষ হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।

কাগজে কলমে ডায়াগনস্টিক সেন্টার হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। মাইমুনা সুলতানা
নামে ৪ বছরের এক শিশুর রক্তের ইনফেকশন পরিমাণ নির্ণয় পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। ফলে শিশুটির জীন বিপন্ন হওয়ার
পথে।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি পাইনাদী এলাকার বাসিন্দা মো. শফিকের ৪ বছরের মেয়ে মাইমুনা সুলতানা জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে ১৫ এপ্রিল হাতুড়ে ডাক্তার ফিরোজ আলমের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ডাক্তার ফিরোজ আলম
শিশুটিকে হেমাটোলজি ও সেরোলজি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরে শিশুটিকে নিয়ে তার পিতা এস. আলম ডিজিটাল ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করান।

সেরোলজি পরীক্ষায় শিশুটির সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (সিআরপি) পরীক্ষার রিপোর্টে রক্তের পেণ্টামেরিক প্রোটিন ৫০ দশমিক ২ এম.জি/এল পরিমাণ দেখানো হয়। রিপোর্টে এম.ফিল সি প্যাথলজি ডাক্তার মো. শাহাদাত হোসেন ও ডিপ্লোমা ইন ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তার সাকিল
পারভেজের স্বাক্ষর রয়েছে। সে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে হাতুড়ে ডাক্তার ফিরোজ আলম শিশুটিকে ইনজেকশন ও ওষুধ দেন। এতে শিশুটির শারীরিক অবস্থা চরম অবনতি হয়।

শিশুর পিতা শফিকুল বলেন, মেয়ের অবস্থা খারাপ হলে আমি অন্য একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাই। তখন এ রিপোর্ট দেখে ওই ডাক্তার অবাক হয়ে বলেন, মানুষের রক্তে ইনফেকশনের পরিমান কখনো ৫০ দশমিক ২ এম.জি/এল হতে পারে না। তাই তিনি আবার পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। তখন আমি ১৭ এপ্রিল মেয়েকে সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে আবার পরীক্ষা করাই। সেখানে পরীক্ষা রিপোর্টে রক্তের পেণ্টামেরিক প্রোটিন পরিমাণ আসে ১৫ দশমিক ১ এমজি/এল। তখন আমি প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী ডাক্তার মো. মামুন অর রশিদ ও রেহানা আক্তার সোনিয়াকে এস. আলম ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট দেখালে তারাও অবাক হয়ে বলেন এটা অসম্ভব। রিপোর্টটি
সঠিক হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এস.আলম ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক একাডেমিক শিক্ষাগত ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তার, ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত নার্স ও রোগী দেখার জন্য
নিয়মিত এমবিবিএস ডাক্তার নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তারা নিজেরাই মনগড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা রিপোর্ট তৈরি তাদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নামি-দামি সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের এমবিবিএস ডাক্তার ও ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তারের সিল স্বাক্ষর দিয়ে রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। তাদের এ ভুল রিপোর্টে চিকিৎসা করে রোগীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, একদিন আগে পরের রিপোর্ট কিছু ব্যবধান হতেই পারে। তাই বলে ৩৫ পার্সেন প্রশ্ন করলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়ে ল্যাব টেকনোলজিস্ট ডাক্তার সাকিল পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ডাক্তার সাকিল পারভেজ বলেন, আমাদের রিপোর্ট ভুল নয়। আমাদের রিপোর্টের দুদিন পর ওই রিপোর্ট করা হয়েছে। দুদিন ওষুধ সেবন করায় শিশুটির রক্তের প্রোটিন পরিমাণ কমে গেছে।