মোয়াজ্জম হোসেন হিলারী, বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কমিটি গঠন নিয়ে বকশীগঞ্জে বিএনপি নেতা কর্মীরা এখনো দুটি ভাগে বিভক্ত রয়েছেন। বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও চারবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে অপর অংশের নেতাকর্মীরা রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মানিক সওদাগরের সঙ্গে। উভয় গ্রুপ বকশীগঞ্জে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশ করে তাদের সামর্থ্য জানান দিয়েছিল।
উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির ত্যাগী ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের ব্যানারে সম্মেলন স্থগিতের দাবিতে সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে মিছিল মিটিং ও সমাবেশ করা হয়।
এ সময় সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রউফ তালুকদার সম্মেলন স্থগিতের দাবি তোলেন তিনি বলেন সাংগঠনিক নিয়ম অনুয়ায়ী আহবায়ক কমিটি হোক বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি হোক সেই কমিটিকে আগে বিলুপ্ত করতে হবে বিলুপ্তির আগে ওয়ার্ড কমিটি এবং ইউনিয়ন কমিটিকে ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন ভাবে ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন কমিটি করে তারপর সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি করতে হবে আর সবাইকে রাজনীতি করার সুযোগ দানের লক্ষ্যে তিনি জেলার নেতৃবৃন্দ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
অবশেষে নানান নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে বকশীগঞ্জে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত ১২ মার্চ (বুধবার) জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন স্বাক্ষরিত ০৫ সদস্য বিশিষ্ঠ উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির আংশিক কমিটি অনুমোদন করেন এবং ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমাদানের নির্দেশ দেন।
উপজেলা বিএনপিতে আলহাজ্ব মানিক সওদাগর কে সভাপতি ও জাহিদুল ইসলাম প্রিন্সকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসিবুল হক সঞ্জু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ক্বারী ও ময়নুল হোসেন সম্পদকে সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
একই দিনে অ্যাডভোকেট আনিসুজ্জামান গামাকে সভাপতি ও সাইফুল ইসলাম তালুকদার শাকিলকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে পৌর কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পৌর কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সানোয়ার সওদাগর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও শাহজাহান পারভেজ শাহীনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি’র কোন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি সেদিন। অবশেষে ১২ ই মার্চ উপজেলা কমিটি ও পৌর কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি।
আংশিক কমিটি অনুমোদন প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক রকিবুল হাসান বাবুল বলেন বর্তমানে উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব যাদেরকে দেওয়া হয়েছে তারা একসময় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের হাত ধরে স্ব-দলবলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন এবং তার ছোট ভাই নজরুল ইসলাম সওদাগর পৌর যুবলীগের আহবায়ক। নজরুল ইসলাম সওদাগর ৫ তারিখের ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য রাম দা লাঠি শুটা হাতে অবস্থান নিয়েছিলেন। যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো রয়েছে আর এর কারণেই সম্মেলন মঞ্চে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন তাকে গ্রেফতার করার জন্য তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম বলেন বিগত সময়ে যারা আওয়ামী লীগের দোষর ছিল যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজু ছিল তাদেরকেই কমিটি দেয়া হয়েছে। এ কমিটি দেওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ। আমরা এই কমিটিকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আশা করি হাইব্রিডদের বাদ দিয়ে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে এবং তাদের দিয়ে পুনরায় কমিটি গঠন করে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা হবে। যতদিন পর্যন্ত বিএনপির ত্যাগী ও পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন বিষয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, বিএনপি এক পরিবার আমাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। যারা বহিরাগত যারা একসময় বিএনপি করেছে আওয়ামী লীগের সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছে তারা বিএনপির নামধারী। আওয়ামী লীগের সময়ে যারা কমিটি নিতে চায় নাই তারা শেষে বিএনপির সু-সময় দেখে সঙ্গবদ্ধ হয়েছে। আমাদের সুপার ফাইভ কমিটি দেয়া হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠন করতে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। বিগত দিনে যারা দলের দুঃসময়ে বিএনপি করেছে তারা সকলেই আমাদের সঙ্গে রয়েছে তৃণমূল বিএনপি আমাদের সঙ্গে রয়েছে এ জায়গায় কোন মতপার্থক্য নেই বিএনপির সু-সময়ে যারা বিএনপিকে ব্যবহার করতে চাইছে তাদের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য। তাদের অযুক্তির দাবি আমাদের কাছে, জেলা বিএনপির কাছে এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে কাউন্টেবল না।
কমিটি অনুমোদন বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন এর কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।