ঢাকা ০৩:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় চরম অবহেলা: সরকারী প্রতিশ্রুতি শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ

  • বেলায়েত হোসেন
  • প্রকাশের সময় : ১১:১৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • ১৩১ বার পড়া হয়েছে

না পাচ্ছি চিকিৎসা, না যাচ্ছি মারা —একজন জুলাই আন্দোলনের আহত যোদ্ধার এই আর্তনাদ যেন প্রতিফলন ঘটাচ্ছে সার্বিক বাস্তবতার। গত বছরের ১৭ আগস্ট স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, জুলাই-অগাস্ট মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল ব্যয় সরকার বহন করবে।

ঘোষণার পরপরই নিহতদের স্মরণে এবং আহতদের সহায়তায় গঠিত হয় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বহুবার সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য। তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাসও দেওয়া হয় যে, প্রতিটি আহত আন্দোলনকারীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নিশ্চিত করা হবে।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য কার্ড থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা নয়, বরং ইনজেকশন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধ—সবকিছুই কিনে নিতে হচ্ছে নিজ খরচে। অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব ব্যয় বহন করার কথা ছিল সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে তদন্তে জানা গেছে, অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি জরুরি ইনজেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক, স্ক্যান, এক্স-রে, এমনকি বেড চার্জও রোগীদের বহন করতে হচ্ছে। অনেক আহত ব্যক্তি চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অর্থাভাবে।

সোহেল রানা নামে এক আন্দোলনকারী অভিযোগ করেন, “সরকার বলেছে চিকিৎসা বিনামূল্যে দেবে, অথচ বাস্তবে চিকিৎসা তো দূরের কথা, ওষুধের খরচ জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই কী স্বাধীন দেশে নাগরিকের অধিকার?”

জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়েছে যখন জানা যায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেরা সরকারী গাড়ি-সুবিধা ভোগ করছেন নিয়মিত, অথচ আহতদের মৌলিক চিকিৎসার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। একজন আহত ব্যক্তির কটাক্ষ, “চিকিৎসার খরচ কি আমাদের বাবার পকেট থেকে যাবে? নাটক না করে বরং বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিন আপনারা কী করবেন না করবেন।”

তাদের প্রশ্ন—স্বাস্থ্য কার্ডের প্রয়োজন কী ছিল যদি তা ব্যবহার করেও কোনো উপকার পাওয়া না যায়? কেন জনগণের করের টাকায় ওষুধের বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না? কোথায় যাচ্ছে সেই বাজেট?

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ জনগণ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

আহতদের একটাই দাবি—ঘোষণা নয়, বাস্তব সেবা। তাদের প্রশ্ন, “আমরা কি নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছে শুধু ভোট দেওয়ার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ? জীবন-মরণে পাশে দাঁড়ানো কি সরকারের দায়িত্ব নয়?”

সরকারি দায়িত্বশীলদের কাছে সবার একটাই অনুরোধ: অবিলম্বে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করুন এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটান। কেবল কথায় নয়, কাজে তার প্রতিফলন চাই।

খবর টি শেয়ার করুন :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Munna Khan

সর্বাধিক পঠিত

মতলব উত্তরে ছেংগারচর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: চার দোকান পুড়ে ছাই

জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় চরম অবহেলা: সরকারী প্রতিশ্রুতি শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ

প্রকাশের সময় : ১১:১৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

না পাচ্ছি চিকিৎসা, না যাচ্ছি মারা —একজন জুলাই আন্দোলনের আহত যোদ্ধার এই আর্তনাদ যেন প্রতিফলন ঘটাচ্ছে সার্বিক বাস্তবতার। গত বছরের ১৭ আগস্ট স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, জুলাই-অগাস্ট মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল ব্যয় সরকার বহন করবে।

ঘোষণার পরপরই নিহতদের স্মরণে এবং আহতদের সহায়তায় গঠিত হয় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বহুবার সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য। তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাসও দেওয়া হয় যে, প্রতিটি আহত আন্দোলনকারীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নিশ্চিত করা হবে।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য কার্ড থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা নয়, বরং ইনজেকশন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধ—সবকিছুই কিনে নিতে হচ্ছে নিজ খরচে। অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব ব্যয় বহন করার কথা ছিল সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে তদন্তে জানা গেছে, অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি জরুরি ইনজেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক, স্ক্যান, এক্স-রে, এমনকি বেড চার্জও রোগীদের বহন করতে হচ্ছে। অনেক আহত ব্যক্তি চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অর্থাভাবে।

সোহেল রানা নামে এক আন্দোলনকারী অভিযোগ করেন, “সরকার বলেছে চিকিৎসা বিনামূল্যে দেবে, অথচ বাস্তবে চিকিৎসা তো দূরের কথা, ওষুধের খরচ জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই কী স্বাধীন দেশে নাগরিকের অধিকার?”

জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়েছে যখন জানা যায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেরা সরকারী গাড়ি-সুবিধা ভোগ করছেন নিয়মিত, অথচ আহতদের মৌলিক চিকিৎসার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। একজন আহত ব্যক্তির কটাক্ষ, “চিকিৎসার খরচ কি আমাদের বাবার পকেট থেকে যাবে? নাটক না করে বরং বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিন আপনারা কী করবেন না করবেন।”

তাদের প্রশ্ন—স্বাস্থ্য কার্ডের প্রয়োজন কী ছিল যদি তা ব্যবহার করেও কোনো উপকার পাওয়া না যায়? কেন জনগণের করের টাকায় ওষুধের বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না? কোথায় যাচ্ছে সেই বাজেট?

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ জনগণ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

আহতদের একটাই দাবি—ঘোষণা নয়, বাস্তব সেবা। তাদের প্রশ্ন, “আমরা কি নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছে শুধু ভোট দেওয়ার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ? জীবন-মরণে পাশে দাঁড়ানো কি সরকারের দায়িত্ব নয়?”

সরকারি দায়িত্বশীলদের কাছে সবার একটাই অনুরোধ: অবিলম্বে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করুন এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটান। কেবল কথায় নয়, কাজে তার প্রতিফলন চাই।