ঢাকা ১০:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলোচিত সেই দুই বোনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, বিচার কার্যক্রম শুরুর আগেই দেশ ছাড়তে মরিয়া

  • এস আর নিরব, যশোর
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • ৫৪৭ বার পড়া হয়েছে
যশোরের আলোচিত  সেই দুই বোন।প্রেম, প্রভাব এবং চাকরির প্রতিশ্রুতির ফাঁদে ফেলে একের পর এক প্রতারণার অভিযোগে আলোচিত  দুই বোন এখন দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
অন্যদিকে, তারা যে দুটি মামলা করেছিলেন, সেগুলোর একটি খারিজ হয়ে গেছে, অন্যটিরও অভিযোগ প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এতে দুই বোন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিচার কার্যক্রম শুরুর আগেই তারা দেশ ত্যাগের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন করেছেন, কিন্তু পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তাদের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত চিত্র।
সূত্র জানায়, যশোর শহরের বকচর মসজিদপাড়ার বাসিন্দা মতিউর রহমানের দুই মেয়ে ফাতেমাতুস জোহরা ওরফে ইরানী ওরফে মিম এবং তার বড় বোন রাবেয়া বশরী ওরফে মায়শা ওরফে সাথী এক সময় ঢাকায় বসবাস করতেন। সে সময় আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের ছবি ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়ে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকেন।
প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এছাড়া, ছোট বোন ইরানী প্রেমের অভিনয় করে ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট যশোর শহরের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জিকোকে বিয়ে করেন। পরিবার মেনে না নেওয়ায় তারা লোন অফিসপাড়ার খাজা সিটিতে ভাড়া থাকতেন। পরে ইরানী মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে বকচরে চলে যান। তবুও মাসিক ৩৫ হাজার টাকা করে ভরণপোষণ নিতেন।
জিকোর অভিযোগ, ২০২৪ সালের ১৫ মে কুইন্স হাসপাতালের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি ইরানীর হাতে নগদ ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন। পরে ১ জুলাই ইরানী ও তার বোন খাজা সিটি ফ্ল্যাটে গিয়ে তালা ভেঙে দুটি এসি, ফ্রিজ, ওভেন, সোফাসেট এবং ওয়ারড্রোব থেকে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যান। প্রতিবাদ করলে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জিকোর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করেন, যাতে তিনি জেলও খাটেন। জামিনে মুক্ত হয়ে জিকো তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন ও স্ত্রীকে তালাক দেন।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বর এলাকার ইমতিয়াজ হক নামের এক যুবকের পরিবার থেকে। তাদের অভিযোগ, ইরানী জিকোর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ভারতে গিয়ে ইমতিয়াজকে বিয়ে করেন এবং তার পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। ইমতিয়াজের বোন ফারজানা ইয়াসমিন ফোনে এসব তথ্য গ্রামের কাগজকে নিশ্চিত করেন।
কুইন্স হাসপাতালের আইটি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাসান ইমাম শিমুল জানান, ২০২৪ সালের ১৬ মে রোগী মাহমুদা খাতুন সামান্য সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হলেও তার দুই মেয়ে জোরপূর্বক ৭০৩ নম্বর কেবিন দখলে রাখেন এবং ছাড়পত্র দিতে চাইলে হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তারা মোট ৫৪ দিন হাসপাতালে অবস্থান করে প্রায় দুই লাখ টাকা বিল বাকি রেখে চলে যান।
প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশের এসআই নূর ইসলাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। এতে উল্লেখ রয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই ওই দুই বোন খাজা সিটি ফ্ল্যাট থেকে নগদ পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং দুটি এসি, আলমারি, খাট, ট্রেসিং টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র লুট করেন।
অন্যদিকে, জিকোর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলার তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার এসআই কামরুজ্জামান। তদন্তে অভিযোগটি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেওয়া হয়। আরও একটি মামলার অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, অভিযুক্ত দুই বোন বিদেশ ভ্রমণের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চেয়েছেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবর টি শেয়ার করুন :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Munna Khan

সর্বাধিক পঠিত

বকশীগঞ্জে নাবালিকা ভাগ্নিকে ধর্ষণের অভিযোগ, খালু গ্রেফতার।

আলোচিত সেই দুই বোনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, বিচার কার্যক্রম শুরুর আগেই দেশ ছাড়তে মরিয়া

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
যশোরের আলোচিত  সেই দুই বোন।প্রেম, প্রভাব এবং চাকরির প্রতিশ্রুতির ফাঁদে ফেলে একের পর এক প্রতারণার অভিযোগে আলোচিত  দুই বোন এখন দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
অন্যদিকে, তারা যে দুটি মামলা করেছিলেন, সেগুলোর একটি খারিজ হয়ে গেছে, অন্যটিরও অভিযোগ প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এতে দুই বোন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিচার কার্যক্রম শুরুর আগেই তারা দেশ ত্যাগের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন করেছেন, কিন্তু পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তাদের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত চিত্র।
সূত্র জানায়, যশোর শহরের বকচর মসজিদপাড়ার বাসিন্দা মতিউর রহমানের দুই মেয়ে ফাতেমাতুস জোহরা ওরফে ইরানী ওরফে মিম এবং তার বড় বোন রাবেয়া বশরী ওরফে মায়শা ওরফে সাথী এক সময় ঢাকায় বসবাস করতেন। সে সময় আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের ছবি ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়ে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকেন।
প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এছাড়া, ছোট বোন ইরানী প্রেমের অভিনয় করে ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট যশোর শহরের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জিকোকে বিয়ে করেন। পরিবার মেনে না নেওয়ায় তারা লোন অফিসপাড়ার খাজা সিটিতে ভাড়া থাকতেন। পরে ইরানী মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে বকচরে চলে যান। তবুও মাসিক ৩৫ হাজার টাকা করে ভরণপোষণ নিতেন।
জিকোর অভিযোগ, ২০২৪ সালের ১৫ মে কুইন্স হাসপাতালের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি ইরানীর হাতে নগদ ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন। পরে ১ জুলাই ইরানী ও তার বোন খাজা সিটি ফ্ল্যাটে গিয়ে তালা ভেঙে দুটি এসি, ফ্রিজ, ওভেন, সোফাসেট এবং ওয়ারড্রোব থেকে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যান। প্রতিবাদ করলে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জিকোর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করেন, যাতে তিনি জেলও খাটেন। জামিনে মুক্ত হয়ে জিকো তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন ও স্ত্রীকে তালাক দেন।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বর এলাকার ইমতিয়াজ হক নামের এক যুবকের পরিবার থেকে। তাদের অভিযোগ, ইরানী জিকোর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ভারতে গিয়ে ইমতিয়াজকে বিয়ে করেন এবং তার পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। ইমতিয়াজের বোন ফারজানা ইয়াসমিন ফোনে এসব তথ্য গ্রামের কাগজকে নিশ্চিত করেন।
কুইন্স হাসপাতালের আইটি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাসান ইমাম শিমুল জানান, ২০২৪ সালের ১৬ মে রোগী মাহমুদা খাতুন সামান্য সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হলেও তার দুই মেয়ে জোরপূর্বক ৭০৩ নম্বর কেবিন দখলে রাখেন এবং ছাড়পত্র দিতে চাইলে হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তারা মোট ৫৪ দিন হাসপাতালে অবস্থান করে প্রায় দুই লাখ টাকা বিল বাকি রেখে চলে যান।
প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশের এসআই নূর ইসলাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। এতে উল্লেখ রয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই ওই দুই বোন খাজা সিটি ফ্ল্যাট থেকে নগদ পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং দুটি এসি, আলমারি, খাট, ট্রেসিং টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র লুট করেন।
অন্যদিকে, জিকোর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলার তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার এসআই কামরুজ্জামান। তদন্তে অভিযোগটি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেওয়া হয়। আরও একটি মামলার অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, অভিযুক্ত দুই বোন বিদেশ ভ্রমণের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চেয়েছেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।