ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম পর্ব।

  • প্রতিবেদক এর নাম
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার:মোঃইমরান। আমিন আমিন ধনিতে কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর মুখরিত হয়ে উঠেছে। এ যেন গোটা মুসলিমদের এক মিলন মেলা। রবিবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। প্রথম ধাপের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শুরু হয় আজ রবিবার সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আর শেষ হয় ৯টা ৩৫ মিনিটে।মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে তুরাগ প্রান্তর। মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে হেদায়েত, আরোগ্য লাভ, কবরবাসীদের মাগফিরাত কামনা করা হয়।আখেরি মোনাজাতের আগে চলে প্রথম পর্বের প্রথম দফার হেদায়েতি বয়ান। যারা ইজতেমার ময়দান থেকে এক চিল্লা ও ৩ চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা জামাতে গিয়ে কী আমল করবেন এবং মহল্লায় যারা এখান থেকে ফিরে যাবেন, তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কী আমল করবেন তার দিকনির্দেশনা হেদায়েতি বয়ানে তুলে ধরা হয়। হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। এই বয়ানের পরেই ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা নসিহতমূলক বয়ান করেন। তার বয়ান তরজমা করেন শুরায়ী নেজামের শীর্ষ মুরুব্বি বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের এবং আখেরি মোনাজাতে দোয়া পরিচালনা করেন তিনি। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার কলকারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। মোনাজাতকে ঘিরে মানুষের ঢল বাড়তে শুরু করে। এর আগে, ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আমবয়ান, জিকির আসকার ও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন মুসল্লিরা। মুসল্লিদের উদ্দেশে শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ। বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মুফতি উসামা ইসলাম। সকাল ১০টায় তালিম হয়। এরপর ওলামাদের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। তলাবাদের (মাদ্রাসার ছাত্রদের) উদ্দেশে নামাজের মিম্বরে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ। বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা ইসমাঈল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহায়ের। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। বাদ আসর ভারতের মাওলানা জুয়াহের তার বয়ানে বলেন, ইমান আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। দুনিয়ায় আমরা নেয়ামতের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। দুনিয়ায় আমরা এত নেয়ামত ভোগ করছি, যা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, আপনারা যৌবনের কদর করুন, যৌবন থাকাকালীন নাফরমানি কাজ না করে আল্লাহর ইবাদতে সময় ব্যয় করুন। সুস্থতার নেয়ামত আল্লাহ দিয়েছেন, তাই এর কদর করুন। এর আগে সরেজমিনে আশুলিয়া, এয়ারপোর্ট ও তৎসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশা থাকলেও তা উপেক্ষা করেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে যাচ্ছেন মুসল্লিরা। মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় জমায়েতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে জড়ো হয়েছেন। এদিন ফজরের নামাজের পর থেকেই মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে রওনা দেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে তাদের স্রোত বাড়তে থাকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নেমে আসেন। ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ মুসল্লিরা পায়ে হেঁটেই পার করছেন। কারণ বিপুল জনসমাগমের কারণে যানবাহনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক মুসল্লি। যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রওয়ানা করেছেন অনেকে। কেউ পায়ে হেঁটে কেউ বাস ও পিকআপে করে রওনা হয়েছেন। ঢাকার আশুলিয়া থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছেন তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম কিন্তু বাস না পাওয়ায় হেঁটেই রওনা হয়েছি। এখান থেকে খুব বেশি দূরে না, ইনশাআল্লাহ চলে যেতে পারবো। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান এবং বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষপর্যায়ের মুরব্বি কেফায়েতুল্লাহ আজাহারী। তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বলে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। শুরায়ী নেজামের অধীনে আজ রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব-ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। এরপর আগামীকাল সোমবার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়ে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি) মোনাজাতে শেষ হবে। এরপর ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন সাদ অনুসারীরা। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর।

খবর টি শেয়ার করুন :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Munna Khan

সর্বাধিক পঠিত

ব্লাড নিয়ে প্রতারণার বিরুদ্ধে কুমিল্লার স্বেচ্ছাসেবীদের মানববন্ধন

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম পর্ব।

প্রকাশের সময় : ০৮:১৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার:মোঃইমরান। আমিন আমিন ধনিতে কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর মুখরিত হয়ে উঠেছে। এ যেন গোটা মুসলিমদের এক মিলন মেলা। রবিবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। প্রথম ধাপের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শুরু হয় আজ রবিবার সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আর শেষ হয় ৯টা ৩৫ মিনিটে।মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে তুরাগ প্রান্তর। মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে হেদায়েত, আরোগ্য লাভ, কবরবাসীদের মাগফিরাত কামনা করা হয়।আখেরি মোনাজাতের আগে চলে প্রথম পর্বের প্রথম দফার হেদায়েতি বয়ান। যারা ইজতেমার ময়দান থেকে এক চিল্লা ও ৩ চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা জামাতে গিয়ে কী আমল করবেন এবং মহল্লায় যারা এখান থেকে ফিরে যাবেন, তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কী আমল করবেন তার দিকনির্দেশনা হেদায়েতি বয়ানে তুলে ধরা হয়। হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। এই বয়ানের পরেই ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা নসিহতমূলক বয়ান করেন। তার বয়ান তরজমা করেন শুরায়ী নেজামের শীর্ষ মুরুব্বি বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের এবং আখেরি মোনাজাতে দোয়া পরিচালনা করেন তিনি। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার কলকারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। মোনাজাতকে ঘিরে মানুষের ঢল বাড়তে শুরু করে। এর আগে, ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আমবয়ান, জিকির আসকার ও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন মুসল্লিরা। মুসল্লিদের উদ্দেশে শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ। বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মুফতি উসামা ইসলাম। সকাল ১০টায় তালিম হয়। এরপর ওলামাদের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। তলাবাদের (মাদ্রাসার ছাত্রদের) উদ্দেশে নামাজের মিম্বরে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ। বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা ইসমাঈল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহায়ের। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। বাদ আসর ভারতের মাওলানা জুয়াহের তার বয়ানে বলেন, ইমান আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। দুনিয়ায় আমরা নেয়ামতের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। দুনিয়ায় আমরা এত নেয়ামত ভোগ করছি, যা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, আপনারা যৌবনের কদর করুন, যৌবন থাকাকালীন নাফরমানি কাজ না করে আল্লাহর ইবাদতে সময় ব্যয় করুন। সুস্থতার নেয়ামত আল্লাহ দিয়েছেন, তাই এর কদর করুন। এর আগে সরেজমিনে আশুলিয়া, এয়ারপোর্ট ও তৎসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশা থাকলেও তা উপেক্ষা করেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে যাচ্ছেন মুসল্লিরা। মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় জমায়েতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে জড়ো হয়েছেন। এদিন ফজরের নামাজের পর থেকেই মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে রওনা দেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে তাদের স্রোত বাড়তে থাকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নেমে আসেন। ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ মুসল্লিরা পায়ে হেঁটেই পার করছেন। কারণ বিপুল জনসমাগমের কারণে যানবাহনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক মুসল্লি। যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রওয়ানা করেছেন অনেকে। কেউ পায়ে হেঁটে কেউ বাস ও পিকআপে করে রওনা হয়েছেন। ঢাকার আশুলিয়া থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছেন তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম কিন্তু বাস না পাওয়ায় হেঁটেই রওনা হয়েছি। এখান থেকে খুব বেশি দূরে না, ইনশাআল্লাহ চলে যেতে পারবো। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান এবং বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষপর্যায়ের মুরব্বি কেফায়েতুল্লাহ আজাহারী। তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বলে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। শুরায়ী নেজামের অধীনে আজ রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব-ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। এরপর আগামীকাল সোমবার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়ে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি) মোনাজাতে শেষ হবে। এরপর ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন সাদ অনুসারীরা। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর।